কাপে যখন গরম চা ঢালা হয়, তখন সেই তাপে প্লাস্টিক বা পলিথিন গলে চায়ে মিশে যায়। এসব কাপে চা-কফির মতো গরম পানীয় খেলে পানীয়ের সঙ্গে কোটি কোটি অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
বিশেষত গরম খাবারের ক্ষেত্রে এই প্লাস্টিক কণা খাদ্যের সঙ্গে মিশে আমাদের শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। এই প্লাস্টিকের কণা মানবদেহের ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এতে মাইক্রোপ্লাস্টিকে ক্রোমিয়াম, লেডের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। এছাড়া বিসফেনল নামক ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার ক্যানসারের কারণ। এটি হরমোনের উৎপাদনের ক্ষতি করে। পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদন কমিয়ে দেয়, নারীদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদনে বাধা তৈরি করে এবং পলিইথিলিন রক্তের কোষকে ভেঙে ফেলে। ফলে স্থায়ী কিডনী রোগ, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হরমোনের বহুবিধ সমস্যা হতে পারে এ থেকে। বিশেষত নারীদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া, গর্ভস্থ শিশুদের বিকাশে সমস্যা, এমনকি শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
ডা. হাসান মোস্তফা গবেষনা করে বলেনঃ
সম্মানিত পাঠক বন্ধুগণ ডা. হাসান মোস্তফা বলেন, সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবির) একদল গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ সব তথ্য। গবেষক দলটি যশোর শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে পলিস্টাইরিন প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম ২০টি কাপ সংগ্রহ করেন। তাতে চা, কোমল পানীয় এবং লাচ্ছির নমুনা রেখে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর ১৭টি নমুনায় ভারি ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি তারা একই খাদ্যপণ্যগুলো সাধারণ কাচের পাত্রে পরীক্ষা চালিয়ে কোনো ভারি ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাননি। প্লাস্টিকের কাপের নমুনাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বেশি পাওয়া গেছে কপার, লেড, ক্রোমিয়াম এবং ক্যাডমিয়াম। এজন্য গবেষকরা ওয়ান টাইম প্লাস্টিক কাপে গরম চা বা পানীয় ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন এবং বিকল্প হিসেবে মাটি বা কাগজের কাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
ডা. হাসান মোস্তফা গবেষনা করণীয়ঃ
সম্মানিত পাঠক বন্ধুগণ ডা. হাসান মোস্তফা বলেন, এই প্লাস্টিকগুলো পরিবেশে বছরের পর ধরে রয়ে যায়, যা মাটির সঙ্গে মিশে যায় না ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। মাটি বা পানিতে থেকে যাওয়া এই প্লাস্টিক সরাসরি মানবদেহ, অন্যান্য প্রাণী ও অণুজীবের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে ইকোসিস্টেমের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার বহুলাংশে কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে শরীরে প্লাস্টিক কণার প্রবেশ রোধ করার জন্য কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। যেমন-
১. ‘ফুড গ্রেড’ প্লাস্টিকের পাত্র বা প্যাকেট ছাড়া অন্য প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করা যাবে না।
২. ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের পাত্রে কখনোই গরম খাবার বা পানি রাখা যাবে না।
৩. ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের পাত্র ওভেনে গরম করবেন না।
৪. গরম তরল খাবার গ্রহণের জন্য প্রচলিত ‘স্ট্র’ পরিহার করা উচিত।
৫. গরম তরল নাড়াচাড়া করতে প্লাস্টিকের চামচ ব্যবহার না করা।
৬. ওয়ান টাইম কাপ বা গ্লাসে চা-কফি খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। বাইরে গেলেও প্রয়োজনে এগুলোর বিকল্প নিজের কাছে রাখতে পারেন।
৭. এসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে সিরামিক, মাটি, কাগজ, ভালো প্লাস্টিক বা বাঁশের তৈরি ওয়ান টাইম চামচ, কাঁটাচামচ, প্লেট, গ্লাস প্রভৃতি ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৮. বিশেষত ফাস্টফুডের মতো খাবার ওয়ান টাইম প্যাকেট বা পলিথিনের বদলে পাতলা কাগজে মুড়িয়ে বা কাগজের প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে।
পরিশেষেঃ
সম্মানিত পাঠক বন্ধুগণ আশা করি উপরোক্ত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এবং ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের প্লেট বা পাত্র বা গ্লাস চা কফি থেকে শুরু করে ভাত খাওয়া পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং তা থেকে কিভাবে বাঁচা যায় বা করনীয় সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উপরের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই সম্পূর্ণ প্রতি বিধানটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি খোদাহাফেজ।